বিদ্যালয়ের ইতিহাস

পার্বত্য চট্টগ্রামের সবচেয়ে পশ্চাৎপদ ও অনগ্রসর ম্রো ও খুমী সম্প্রদায়ের ছাত্র-ছাত্রীদেরকে সম্পূর্ণ বিনা খরচে শিক্ষা, খাদ্য, পোশাক-পরিচ্ছেদ, প্রাথমিক চিকিৎসা ও আবাসন সুবিধা দিয়ে মূলধারার শিক্ষার সাথে সম্পৃক্ত করার জন্য  ১৯৮০ সালে ম্রো আবাসিক উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়। প্রতিষ্ঠার পেছনে মূল উদ্দেশ্য ছিলো পার্বত্য অঞ্চলের অসহায় ও সুবিধাবঞ্চিত ম্রো ও খুমি শিশুদের আবাসন, শিক্ষা ও চিকিৎসা সুবিধা প্রদান করে তাদেরকে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা।  ১৯৮৮ সালে এটি চট্টগ্রাম মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ডের স্বীকৃতি লাভ করে। ১৯৮৯ সালে ম্রো আবাসিক উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা প্রথম এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ পায়।

মাত্র ৫০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে ১৯৮০ সালের ২১শে জানুয়ারী থেকে বিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরু হয়। সময়ের বিবর্তনে বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে। প্রতি বছর বাড়ছে। শিক্ষক-কর্মচারীর সংখ্যাও বেড়েছে।

বলা বাহুল্য, বান্দরবান পার্বত্য জেলা ভৌগলিকভাবে অত্যন্ত দুর্গম। অনেক জায়গায় বিদ্যালয় নেই। অনেক জায়গায় বিদ্যালয় থাকলেও পর্যাপ্ত শিক্ষক ও অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা নেই। ’সরকারের সবার জন্য প্রাথমিক শিক্ষা’ নীতির কারণে বর্তমানে বান্দরবান পার্বত্য অঞ্চলেও বিভিন্ন জায়গায় প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তা সত্ত্বেও এখনো ম্রো ও খুমি পরিবারের অনেক শিশু শিক্ষা সুযোগের আওতার বাইরে রয়ে গেছে। এছাড়া কোন মতে প্রাথমিক স্তর পর্যন্ত পড়ালেখা শেষ করতে পারলেও অনেক শিক্ষার্থী নিম্ন মাধ্যমিক অথবা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে যেতে পারে না। এর অন্যতম প্রধান কারণ হলো গ্রামের কাছাকাছি নিম্ন মাধ্যমিক অথবা মাধ্যমিক বিদ্যালয় না থাকা। অন্যদিকে পার্বত্য অঞ্চলে আবাসিক বিদ্যালয়ের সুযোগ-সুবিধা নেই। দারিদ্র্যের কারণে অনেক অভিভাবকের পক্ষেও উপজেলা বা জেলা সদরে লজিং বা ঘর ভাড়া করে ছেলেমেয়ে পড়ানো সম্ভব হয় না। দেশের আর্থ-সামাজিক বাস্তবতায় এই সমস্যা মেয়েদের জন্যে আরো বেশি প্রকট। এই অবস্থায় আবাসিক বিদ্যালয় হিসেবে ম্রো আবাসিক উচ্চ বিদ্যালয় অনেক অভিভাবকের কাছে তাদের ছেলে-মেয়েদের শিক্ষার একমাত্র ভরসা স্থল।

বান্দরবান পার্বত্য জেলার  বিভিন্ন প্রান্তিক জায়গা থেকে ছেলে-মেয়েরা ম্রো আবাসিক উচ্চ ভর্তি হতে আসে। দেখা গেছে, এসব ছেলে-মেয়েদের অনেক ভাষাগত সমস্যা রয়েছে এবং ঘাটতি রয়েছে তাদের প্রান্তিক যোগ্যতা অর্জনে। দারিদ্র্য তো আছেই। এসব সমস্যা মোকাবিলা করে শিক্ষকমন্ডলী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দিয়ে মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার প্রাণান্ত প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। শিক্ষার্থীদের পেছনে তারা মেধা ও শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন।

দুর্গম পার্বত্য অঞ্চলের কথা বিবেচনায় নিলে ম্রো আবাসিক বিদ্যালয়ের অর্জন কম নয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখান থেকে হাজারের অধিক শিক্ষার্থী পাস করে বের হয়ে গেছে। তাদের মধ্যে অনেকেই উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করে সরকারী-বেসরকারী বিভিন্ন সংস্থায় কর্মরত আছেন। তাদের অনেকে আইনজীবি, উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ, সরকারী ও বেসরকারী চাকরি করে মেধা ও প্রতিভার স্বাক্ষর রেখে চলেছেন। তারা সমাজ ও দেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন।

যুগের পরিবর্তন ও চাহিদা বিবেচনায় নিয়ে বিদ্যালয়কে একটি আধুনিক ও যুগোপোযোগী শিক্ষাকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। এই লক্ষ্য অর্জনে ছাত্র-শিক্ষক, অভিভাবক ও বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনার সাথে সংশ্লিষ্ট সবাইকে একযোগে এবং সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।